নিয়মিত আঙ্গুর খেলে যেসব সুফল পাবেন

খালি পেটে আপেল খেলে কি হয় জানুনপুরো পৃথিবীতে আঙ্গুর বেশ জনপ্রিয় একটি ফল। নিয়মিত আঙ্গুর খেলে যেসব সুফল পাবেন তা আমাদের অনেকের অজানা। আঙ্গুরের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। আঙ্গুরের ভেতরে বিদ্যমান ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।

আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা
এ পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আরো আলোচনা করেছি নিয়মিত আঙ্গুর খেলে যেসব সুফল পাবেন,আঙ্গুরে পুষ্টিগুন সহ বিভিন্ন বিষয়ে। সুতরাং বিস্তারিত জানতে এই পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকাঃ


আঙ্গুর আমাদের সবার কাছে বেশ জনপ্রিয় এবং পরিচিত একটি ফল। পুষ্টিগুণ বিবেচনা করলেও আঙ্গুর হবে একটি প্রথম সারির ফল। সারা বিশ্বে বেশ কয়েক ধরনের আঙ্গুর পাওয়া গেলেও আমরা সাধারণত লাল সাদা এবং কালো আঙ্গুর বেশি দেখি। লাল আঙ্গুরে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে অন্যান্য আঙ্গুরের তুলনায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি।
এছাড়াও পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফলিক, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ও আয়রনের মত প্রয়োজনীয় পুষ্টি আছে এই আঙ্গুরে। বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশে এই ফলের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আঙ্গুর ফল টক মিষ্টি স্বাদের হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে রয়েছে এর বিশেষ অবদান। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমরা আঙ্গুর রাখতেই পারি।

আঙ্গুরের পুষ্টিগুণঃ


আঙ্গুর খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি ফল যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আঙ্গুর ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন আছে যা আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কাজ করে। প্রায় সারা বছরই এই ফলটি পাওয়া যায়। আঙ্গুরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি৬ এবং খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়াম। আমাদের শরীরের জন্য আঙ্গুরের উপকারিতার শেষ নেই। প্রতি ১০০ গ্রাম আঙ্গুরে আমরা ৩২ কিলোক্যালরি পাই।

আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতাঃ


এন্টি অক্সিডেন্টঃ আঙ্গুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে নানাভাবে কাজে লাগে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ ভালোভাবে রক্ত সঞ্চালন এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে আঙ্গুরের খোসা এবং বীজে সুতরাং খাওয়ার সময় আমাদের এগুলো বাদ দিয়ে খাওয়া উচিত না।

ত্বকের সমস্যায়ঃ আঙ্গুরে রয়েছে ফাইটো কেমিক্যাল ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট যা ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করে। তাছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকায় ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে আঙ্গুর রয়েছে রেসভারেট্রল।এটি ব্যঞ্জন পার অক্সাইড এর সঙ্গে মিলে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে মোকাবেলা করে। ব্রণ হওয়ার জন্য এই ব্যাকটেরিয়ায় দায়ী।

পর্যাপ্ত পটাশিয়ামঃ আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে। ১০০ গ্রাম আঙ্গুরে ১৯১ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এই পটাশিয়াম আমাদের শরীরের নানা ধরনের উপকার করে থাকে। লো সোডিয়াম ও হাই পটাশিয়াম ডায়েট মেনে চললে উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এর ফলে হার্টের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় জানা যায় চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে আঙ্গুর।রেটিনায় প্রটেক্টিভ প্রোটিনের মাত্রা বাড়ায় যার ফলে নিয়মিত আঙ্গুর খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ রেসভারেট্রল মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের স্মৃতি জড়িত সমস্যা আছে তারা নিয়মিত আঙ্গুর খাবেন তাহলে তারা ভালো উপকার পাবেন।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আঙ্গুর হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি পেটের পিড়াও দূর করে থাকে। নিয়মিত আঙ্গুর খেলে বদ হজম দূর হয়।

বার্ধক্য রোধ করেঃ আঙ্গুরে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বার্ধক্য রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আঙ্গুরে বিদ্যমান ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিক্যাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।

রক্তস্বল্পতা রোধ করেঃ রক্তস্বল্পতার কারণে অনেকেই দুর্বল হয়ে যায় এবং অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে। আঙ্গুর এই সমস্যা সমাধান করে। আঙ্গুলে থাকা আইরন এবং অন্যান্য প্রয়োজনে মিনারেল রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে এবং রক্তস্বল্পতা রোধ করতে সাহায্য করে।

কিডনির সমস্যা সমাধানেঃ কিডনির সমস্যা সমাধানে আঙ্গুর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আঙ্গুর যেহেতু পানি জাতীয় ফল তাই কিডনি পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে এবং কিডনির যেকোনো সমস্যা থেকে আমাদের মুক্ত রাখে।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধঃ আঙ্গুর স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। আঙ্গুরে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের ক্যান্সারের কোষ তৈরি হতে বাধা দেয় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর খাওয়ার অপকারিতাঃ


গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর খাওয়ার কিছু অপকারিতা আছে। আঙ্গুরে থাকা রেশভারেট্রল নামক যৌগ যা হারমোনের ভারসাম্য হীনতা সৃষ্টি করে। আঙ্গুরে আছে তাপ উৎপাদনকারী উপাদান যা মা ও শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে। তার জন্য গর্ভবতী মহিলাদের অন্তত শেষের তিন মাস আঙ্গুর খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

সবুজ আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতাঃ


সবুজ আঙ্গুরের মধ্যে রয়েছে ক্যাটেকিনস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এ কারণে ফেসিয়াল করার সময় আঙ্গুরের রস দিতে দেখা যায়। ভিটামিন সি থাকায় সবুজ আঙ্গুর ব্যাকটেরিয়াল এবং ফাঙ্গাস ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে। 
এছাড়াও ভিটামিন কে হাড়ের করটিলেজ ভালো রাখতে সহায়তা করে। কালো আঙ্গুর এর মত সবুজ আঙ্গুরও শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয়।পুষ্টিগুলো প্রায় এক।

বাচ্চাদের আঙ্গুর খাওয়ার নিয়মঃ


বাচ্চাদের জন্য আঙ্গুর যথেষ্ট উপকারী একটি ফল। তবে বাচ্চাদের কখন থেকে আঙ্গুর খেতে দিতে হবে এ বিষয়টা আমাদের সবারই জানা উচিত। শিশুরা যে সময় থেকে কঠিন খাবার খাওয়া শুরু করে তখন থেকে মোটামুটি ভাবে আঙ্গুর দেয়া যেতে পারে। যে শিশুর বয়স ১০ মাস হয়ে গেছে আঙ্গুর দেয়া যেতে পারে। অনেকেই ছয় মাস বয়স থেকেই বাচ্চাকে আঙ্গুর দিতে শুরু করে কিন্তু ৮ মাস অথবা তার বেশি পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভালো।

আঙ্গুর খাওয়ার অপকারিতাঃ


এলার্জির সমস্যাঃ আঙ্গুর ফল খেলে অনেকেরই এলার্জি সমস্যা হতে পারে। যাদের আগে থেকেই এলার্জির সমস্যা আছে সেই ক্ষেত্রে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আঙ্গুর খেতে পারেন। আঙ্গুরের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা এলার্জি তৈরি করতে সহায়তা করে। এলার্জি হলে লাল ফুসকুড়ির মত হয়। অতিরিক্ত আঙ্গুর খেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। এলার্জি সমস্যার বিষয়টা একেক জনের কাছে একেক রকম।

ওজন বৃদ্ধি করেঃ যারা শরীরের ওজন বাড়াতে চান না তারা আঙ্গুর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। আঙ্গুর ফল ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই যারা শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা আঙ্গুর খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। এক কাপ আঙ্গুরের রসে প্রায় ১০০ গ্রাম ক্যালরি থাকে। কিন্তু আঙ্গুর খুব ছোট ফল হওয়ায় আমাদের বেশি খাওয়া হয়ে যায় ফলে ক্যালরি বেড়ে যায়। রোজ আঙ্গুর খেলে অতিরিক্ত ক্যালরি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

লেখকের মন্তব্যঃ


ছোট বড় সবার জন্যই আঙ্গুর যথেষ্ট উপকারী। ছোটদের একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত আঙ্গুর না দেওয়াই ভালো। ৮ থেকে ১০ মাস বয়সের পর থেকে বাচ্চাদের আঙ্গুর খাওয়ানো যেতে পারে। আঙ্গুরে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

তবে আঙ্গুর খাওয়ার যথাযথ ফলাফল পেতে আমাদেরকে অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আঙ্গুর খেতে হবে প্রতিনিয়ত। বেশি কোন কিছুই ভালো নয় সুতরাং বেশি আঙ্গুর খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

প্রিয় পাঠক, এই পোস্টে আমরা নিয়মিত আঙ্গুর খেলে যেসব সুফল পাবেন, ছোট বাচ্চাদের আঙ্গুর খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি আলোচনা করেছি। যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url