ইসবগুলের ভুসির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্বন্ধে জানুন

চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতাইসবগুলের ভুষি আমাদের সবার কাছেই বেশ পরিচিত একটা নাম। যদিও ইসবগুলের ভুসির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা অনেক তারপরও আমরা তেমন একটা গুরুত্ব দিয়ে এটা খেতে চায় না। এর উপকারিতার কথা মাথায় রেখে আমাদের নিয়মিত ইসব গুলের ভুষি খাওয়া উচিত।

ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা
এ পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আরো আলোচনা করেছি ইসবগুলের ভুসির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। সুতরাং এ বিষয়গুলো জানতে অবশ্যই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকাঃ


ইসবগুল গুল্ম জাতীয় গাছ। এর ফুল ছোট হয় এবং পাপড়িও সূক্ষ্ম। ইসবগুলের গাছের উচ্চতা দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এটা এক ধরনের রবি শষ্যর মধ্যে পড়ে। হেমন্তকালে বীজ বপন করে চৈত্র মাসে ফসল ঘরে তোলা হয়। ইসবগুলের ভুসির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। এর রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার।
বিশেষ করে যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তারা প্রায় ইসুবগুলের ভুষি খেয়ে থাকেন। নিয়ম করে ইসবগুলের ভুসি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা ছাড়াও বেশ কিছু ছোট বড় অসুখেরই সমাধান মেলে। আমরা যদিও খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে ইসবগুলের ভুষি খেতে চায় না কিন্তু তারপরও যদি আমরা এটা খাওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করি তবে আমাদের সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ইসবগুলের ভুষির পুষ্টিগুণঃ


ইসবগুলের ভুষির অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এইসব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের খুবই উপকারী। শুধু আমাদের নিয়ম করে নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খাওয়া উচিত। ১ টেবিল চামচ এসব গুলের ভুসিতে ৫৩% ক্যালরি, ০% ফ্যাট, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।

ইসবগুলের ভুষির উপকারিতাঃ


কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুষি খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুল খেতে হবে এটা আমরা প্রায় অনেকেই জানি। কোষ্ঠকাঠিন্যকে আমরা অনেকেই সাধারণ অসুখ মনে করলেও এটা কিন্তু অনেক কঠিন অসুখ। এর ফলে শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক নানা ক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

ফলে সারা শরীরে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এই সমস্যার সমাধানেই প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি সঙ্গে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেয়ে নিন। এতেই সমস্যার সমাধান হবে।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করেঃ অনেকেরই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করার সমস্যা থাকে। নিয়মিত ইসব গুলের ভুসি খেলে এই সমস্যা কিছুটা কমবে। এই সমস্যা দূর করতে চাইলে গুড়ের সঙ্গে ইসব গুলের ভুষি মিশিয়ে খেতে পারেন। নিয়মিত এভাবে একটানা এক সপ্তাহ খেলে বেশ উপকার পাবেন।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করেঃ আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষেরই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে। খাদ্যাভ্যাস ঠিক না থাকা এর একটা বড় কারণ। ঘরোয়াভাবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে উপায় হতে পারে ইসবগুলের ভুষি। এটি পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে। ফলে অ্যাসিটিটির ব্যান্ড থেকে পাকস্থলী রক্ষা পায়।

হজম ঠিক রাখার জন্য পাকস্থলের বিভিন্ন অ্যাসিড নিঃসরণেও সাহায্য করে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত এক গ্লাস ঠান্ডা দুধের সঙ্গে দুই চার চামচ ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেতে পারে না। এতে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি মিলবে।

ডায়রিয়া প্রতিরোধেঃ ডায়রিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইসবগুল। ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটি দুই সঙ্গে মিশে খেতে পারেন। দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক পাকস্থলীর ইনফেকশন সারাতে কাজ করে আর ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়েরি থেকে রোগীর দ্রুতই সেরে ওঠে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা দিনে দুইবার ভরা পেটে তিন টেবিল চামচ দই এবং দুই চা চামচ এসব গুলের ভুষি মিশিয়ে খাবেন। এতে দারুন উপকার পাবেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ জিলাটিন নামক একটা উপাদান রয়েছে ইসবগুলের ভুষিতে। এটি দেহে গ্লুকোজের শোষণ ও ভাঙ্গার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ সহজে বাড়তে পারে না। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এই ভুসি খুবই কার্যকর।

ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতেঃ ইসবগুলের ভুষি আমাদের রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ভুসি খাওয়ার ফলে আমাদের অন্ত্রেএক ধরনের স্তর তৈরি হয় যা কোলেস্টেরল শোষণের বাধা দান করে। ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরল পরিমাণ কমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তাই হৃদরোগীদের জন্য এটি বিশেষ উপকারিতা একটি খাবার।

ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ ইসবগুলের ভুষিতে ফাইবার থাকাই হজম প্রক্রিয়া অনেক ধীরগতিতে হয় যার ফলে ক্ষুধা কম লাগে। এটি খেলে ওজন কমানো অনেকটা সহজ হয়।

হার্ট ভালো রাখতেঃ নিয়মিত ইসবগুলের ভুষি খাওয়া উচিত আমাদের কারণ হার্ট ভালো রাখতে এই ভুসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। এছাড়াও রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্ট্রল সরিয়ে দিতেও কাজ করে। ফলে ধমনীতে ব্লক সৃষ্টির আর ভয় থাকে না।

ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ


ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম আমাদের সকলের জানা উচিত। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ভুসি খাওয়ার কারণে কোন সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা যায়না। সাধারণ মানুষ যারা এই ভুসি খাবেন তারা ২৪০ মিলিলিটার পানির সাথে পাঁচ গ্রাম ভুসি আরও সহজ করে বললে বড় এক গ্লাস পানির মধ্যে এক চা চামচ ভুষি মিশিয়ে খেতে হবে।
অনেকেই রাতের বেলা ভুসি ভিজিয়ে রেখে সকালে খায় কিন্তু ভুসি যেহেতু কার্যকারিতার জন্য অন্ত্র থেকে পানি শোষণ করে তাই পানির সঙ্গে ভুসি মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলা ভালো। দীর্ঘক্ষণ বাইরে ভিজিয়ে রাখলে বাইরে থেকে বেশি পানি শোষণ করে নেবে ফলের কার্যকারিতা কমে যাবে।

খালি পেটে খেলে কি হয়ঃ


খালি পেটে ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার অনেকের অভ্যাস রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য সাধারণত এই ভুসি অনেকেই খেয়ে থাকেন। কারণ এই ভুসি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। খালি পেটে এই ভুসি খেলে আরো বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়। হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে এই ভুসি খুব দারুণ কাজ করে। ফাস্টফুড বা ভাজাপোড়া খাওয়ার পরে অথবা সমস্যা দেখা দিলে ইসবগুলের শরবত কাজে আসে।
ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতেও ইসুবগুলের ভুষির শরবত খান স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা। ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। সুতরাং প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ গ্রাম এসব গুলের ভুষি ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিংবা সকালে খালি পেটে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অপকারিতাঃ


ইসবগুলের ভুষির আমরা বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানি তবে এর কিছু অপকারিতা ও আছে। ভুসি খাওয়ার আগে আমাদের এই অপকারিতার দিকগুলো সম্পর্কে জানা উচিত যদিও এটি সবার ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার ফলে যে সব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তা হল

  • বমি বমি ভাব
  • গ্যাসের সমস্যা
  • ডায়রিয়া
  • পেট ব্যথা
  • এলার্জি
  • গলা ও মুখ ফোলা ফোলা ভাব
  • গিলতে অসুবিধা হওয়া

লেখক এর মন্তব্যঃ


ইসুবগুলের ভুসির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা অনেক। পরিমিত পরিমান ভুসি খেয়ে কারো সমস্যা হয়েছে এরকম ঘটনা খুব একটা শোনা যায় না। আমাদের শরীরের জন্য আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। যদিও বেশিরভাগ মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ইসবগুলের ভুষি খেয়ে থাকে কিন্তু তারপরও এর আরও বেশ কিছু উপকারিতা আছে। নানাবিধ ব্যবহার আছে।

আমরা যদি সঠিক উপকার পেতে চাই তবে সঠিক নিয়মে নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খেতে হবে। তবে আপনি যদি বড় কোন রোগে আক্রান্ত থাকেন তবে এই ভূষি খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

প্রিয় পাঠক, ইসবগুলের ভুসির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের এই আলোচনা যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে যদি কোন উপকারে আসে তবে অবশ্যই পরিচিতদের মাঝে এই পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url